বাইরে উচ্চ শিক্ষার্থে আবেদনে রিসার্চ পেপার থাকাটা অনেক বড় প্লাস পয়েন্ট,কিন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা যেন-তেনো প্রিডেটরি (পড়ার সময় পড়ুন "অখাদ্য") কনফারেন্স ও জার্নালে পেপার পাবলিশ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সিভিতে এড করে দেয় এই ভেবে এবার ফান্ডিং আটকায় কে। কিন্ত এই টাইপের পাবলিকেশন সিভিতে রিসার্চ স্কিল তো বৃদ্ধি করেই না, বরং সিভি পলিউশন করে (হ্যা, দুষিত করে, এক কথায়) আর বাইরের প্রফেসরের কাছে এই টাইপের পাবলিকেশন এক কথায় রিসার্চার হিসেবে আপনি কতটা অসচেতন এবং ধারণাবিহীন সেটাই প্রমান করে। ফলশ্রুতিতে খুবই বাজে ইম্প্রেশন তৈরী হবে আপনার সম্পর্কে। এত কিছু হয়ে গেলেও, বেচারা শিক্ষার্থীর হয়তো কোন ধারনাই নাই প্রিডেটরি জার্নাল ও কনফারেন্স সম্পর্কে, তাই ভাগ্যকে দোষ দিয়ে নেক্সট ইনটেকে আবার এপ্লাই করে আশায় বুক বাধে। যাই হোক, প্রিডেটরি পেপার পাবলিকেশন নিয়ে আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীদের সম্যক ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে এই লেখনী। সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টস, সোশ্যাল সায়েন্স, বিজনেস যেই ফিল্ডেরই হন না কেন, আপনি যদি রিসার্চার হতে চান ভবিষ্যতে অবশ্যই এই লিখাটি পড়ুন।
প্রিডেটরি পাবলিকেশনের শিকার কারা হয় বেশি ?
বাংলাদেশের আন্ডারগ্র্যাডদের অধিকাংশই পিয়ার-রিভিউ, সাইটেশন, জার্নাল সাইটেশন রিপোর্ট (JCR), Social Science Citation Index (SSCI), Science Citation Index (SCI), Science Citation Index Expanded (SCIE) ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারনা না থাকায় তারাই সবচে বেশি এই প্রিডেটরি পাব্লিকেশন এর শিকার হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেও দেখেছি দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিরাও সমানে প্রিডেটরি জার্নালে পাব্লিকেশন করেই যাচ্ছে , কার কত পাবলিকেশন ও প্রমোশন সেটার নোংরা খেলায় মেতে গিয়ে। সত্যি আমাদের দেশের ছাত্ররা শিখবেটা কি যদি এমন ফ্যাকাল্টিরাই তাদের সুপারভাইজার হয়।
প্রিডেটরি পাবলিকেশন কি? কারা আছে এর পিছনে?
ভাল-মন্দ সব খানেই ব্যবসা চলে এসেছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, অনেক আগে থেকেই কিছু অসাধু লোক টাকা কমানোর ধান্ধায় এই প্রিডেটরি জার্নাল ও কনফারেন্স চালু করেছে, যার মধ্যে ইন্ডিয়া ও চায়না ভিত্তিক পাবলিকেশন গুলি একটু বেশিই ডমিনেন্ট ।
প্রিডেটরি কনফারেন্স ও জার্নাল দুটাই হতে পারে। যেসকল কনফারেন্স ও জার্নাল মেইন স্ট্রিম রিসার্চ সায়েন্সটিস্ট ও রিসার্চ কমিউনিটিতে স্বীকৃত নয়, এবং যারা কিনা টাকার বিনিময়ে যেকোন কোয়ালিটিবিহীন অখাদ্য কুখাদ্য পেপার নামকাওয়াস্তে টাইমে দ্রুত পাবলিশ করে অনলাইনে তাদেরকে প্রিডেটরি পাবলিশার বলে এবং এই ধরণের পেপারকে প্রিডেটরি পেপার বলে। এগুলা যদি সিভিতে রাখেন, এবং সেই সিভি কোন ইউরোপ, আমেরিকার প্রফেসর দেখেন, আপনার জন্য সিরিয়াস ব্যাড ইম্প্রেশনের কারণ হবে।
এসব প্রিডেটরি পাবলিশারদের ওয়েবসাইটে কন্টাক্ট এড্রেসে রিজিওনাল অফিস হিসেবে আমেরিকা, ইউকে, অস্ট্রেলিয়ার ঠিকানাও দেয়া থাকে। কিন্ত এরা বহুরূপী।এরা অপারেট করে এক জায়গা থেকে কিন্ত হয়তো সেই এড্রেস দেয়া থাকে না। পাবলিকেশন ফি এর বিনিময়ে, নাম-মাত্র সময়ে পেপার জমা দেবার ( হয়তো 1-2 সপ্তাহ) এর মধ্যে এরা এক্সেপ্টেন্স নোটিফিকেশন পাঠিয়ে, ফি নিয়ে সাথে সাথে পাবলিশ করে দেয়! অথচ একটা ভালো জার্নালে পেপার রিভিউ হতে ১-৬ মাস+ লাগে। আপনি হয়তো মহাখুশি যে আপনার প্রথম পেপার এত দ্রুত রিভিউ হয়ে পাবলিশ হয়েছে। তার মানে আপনার কাজটা সুপার ট্যালেন্টেড টাইপের কিছু একটা ছিল হাহা! আহারে বেচারা! অথচ এই পাবলিকেশনের কোন ভ্যালুই নেই।
প্রিডেটরি কনফারেন্সগুলোতে গেলে কি কি দেখতে পাবেন?
প্রিডেটরি বোগাস জার্নাল বা কনফারেন্স গুলাতে আপনি যে পেপার ই জমা দেবেন একসেপ্ট হবে, আপনি ঐসব বোগাস কনফারেন্সে গিয়ে প্রেজেন্ট করেও আসবেন কিন্ত ওই খানে আপনার মত আরো দশজন অভাগাই উপস্থিত থাকবে, বুঝতেও পারবেন না যদি আগে থেকে না জানেন। এইসব বোগাস কনফারেন্স গুলি বেশিরভাগ ইন্ডিয়াতে আর চায়নাতে হয়। ইন্ডিয়ার এসব প্রিডেটরি কনফারেন্সের অনুষ্ঠানগুলি এরা ভিডিও করে, ছবি তুলে ওয়েবসাইটে দিয়ে রাখে পরবর্তী শিকার ধরার জন্য। আপনি ইন্ডিয়ার এসব বোগাস কনফারেন্স গুলিতে গেলে দেখবেন কনফারেন্স উদ্বোধন এরা বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি নীতি টাইপের যেমন মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো টাইপের একটিভিটি দিয়ে করতেছে!! শতভাগ নিশ্চিত থাকেন ইন্টারন্যাশনাল কোন সায়েন্সটিস্টদের কনফারেন্স কখনো এরকম লোক্যাল ধর্মীয় একটিভিটি দিয়ে উদ্বোধন হবে না। এরকম কিছু দেখলেই বুঝবেন আপনি বোগাস কনফারেন্স এটেন্ড করতেছেন।
বোগাস কনফারেন্স ও ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স দুটাতেই টাকা লাগে তাহলে দুটার পার্থক্য কি?
ইন্টারন্যাশনাল ভালো কনফারেন্সগুলিতেও পেপার পাবলিশ করতে টাকা লাগে কিন্ত অর্গানাইজিং কমিটি মেম্বারদের প্রত্যেকেই সনামধন্য ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। একটা কনফারেন্স আয়োজন করতে হোটেল ভেন্যু, লজিস্টিকস খরচ আছে সেগুলার জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সগুলো টাকা চার্জ করে। কিন্ত বোগাস কনফারেন্সগুলো যে টাকা নিবে তার শতভাগ জলে যাবে নিশ্চিত থাকুন।
আপনি চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, কিছু টেকনিক্যাল কাল্পনিক jargon (প্রযুক্তিগত পরিভাষা) সমৃদ্ধ একটা বানোয়াট পেপার লেখেন, কিছু কল্পনিক গ্রাফ দেন, এবং ওইসব বোগাস কনফারেন্সে জমা দেন, দেখবেন একসেপ্ট করছে (🤣)। এগুলা জাস্ট টাকা কামানোর জন্য আয়োজন করা হয়।
এগুলা নিয়ে অনেক বাস্তব রিপোর্ট বের হয়েছে, সেগুলা গুগল করলেই পেয়ে যাবেন। অনেক সনামধন্য ইউনিভার্সিটির প্রফেসরগণ নিজেদের ব্যক্তিগত ব্লগে এসব নিয়ে লিখেছেন, যে তারা এরকম কাল্পনিক পরিভাষা দিয়ে, আরো কিছু কাল্পনিক গ্রাফ বানিয়ে নিজের পোষা কুকুর-বিড়ালের নাম পেপারের অথার হিসেবে দিয়ে ঐসব বোগাস কনফারেন্স জমা দিয়ে এক্সেপ্টড হয়েছেন, এসব নিয়ে মজা করে লিখেছেন অনেকেই ব্লগে।
কিভাবে প্রিডেটরি বোগাস ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সগুলি চিহ্নিত করবেন?
আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করার জন্য Technical Program Committee (TPC) সহ আয়োজক কমিটি (organizing committee) থাকে যাদের মধ্যে প্রফেসর কিংবা ইন্ড্রাস্ট্রির R&D তে কাজ করছে এমন সায়েন্টিস্টগন থাকেন। এদের কাজ জমাকৃত সমস্ত পেপার রিভিঊ করে এক্সেপ্ট বা রিজেক্ট ডিসিশন দেয়া শুরু করে, কনফারেন্স আয়োজনের যাবতিয় খুটিনাটি দেখভাল করা।
একারনে একটা কনফারেন্স আদৌ রিলায়েবল নাকি বোগাস সেটা বোঝার উপায় হলো ওই কনফারেন্স এর ওয়েবসাইটে গিয়ে organizing committee, Technical program committee, invited speaker etc. committee তে থাকা লোকজনদের প্রোফাইল দেখা যে আদৌ তাদের এফিলিয়েশন কোন ভালো ইউনিভার্সিটির কিনা বা তারা আদৌ ভাল কোন ভার্সিটির প্রফেসর কিনা।
অনেক বোগাস প্রিডেটরি কনফারেন্স তাদের কমিটিতে/ইনভাইটেড স্পিকার সেকশনে অনেক প্রফেসরদের নাম এফিলিয়েশন এড করে দেয় তাদের অজান্তেই। অতএব সন্দেহ হলেই, ওই প্রফেসরকে ইমেল করে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করতে পারো তিনি সত্যি সত্যি অর্গানাইজিং কমিটিতে বা স্পিকার হিসেবে আছেন নাকি। আর হ্যা, ইমেলটা যেন প্রফেসরের নিজের ইউনিভার্সিটির ইমেইল হয়, ইয়াহু, জিমেইল হলে সন্দেহ বেশি করবে,আরো।
সন্দেহ হলেই নিচের মত ইমেইল লিখে প্রফেসরদের পাঠাতে পারেন যাচাইয়ের জন্য আসলেই কি তারা অর্গানাইজিং/টিপিসি তে আছেন নাকি ওই কনফারেন্সের। এসব ব্যাপারে তারা অনেক কো-অপারেটিভ।
Dear prof. Dr. last name,
I am XYZ from Bangladesh. I was planning to submit my paper in ABC conference and so I was browsing through the organizing committee and found you as one of the members of the committee (here, give full details and link).
Could you please confirm if you are in the organizing the committee.
Thank you very much.
Sincerely Yours,
Your Name and affiliation
প্রিডেটরি বোগাস জার্নাল কিভাবে চিনবেন?
Jeffrey Beall একটা লিস্ট বানিয়েছেন প্রিডেটরি পাবলিশারদের। তিনি বিশ্ব-বিখ্যাত একজন লাইব্রেরিয়ান। উইকিপিডিয়াতে তার সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই লিস্টের মধ্যে যদি আপনার জার্নালের নাম খুঁজে পান, তাহলে ১০০ হাত দূরে থাকুন ওই জার্নাল থেকে। বাইরের দেশের প্রফেসররা এইসব প্রিডেটরি পাবলিকেশন সম্পর্কে অনেক স্ট্রিক্ট। আপনার সিভিতে এই টাইপের পাবলিকেশনের রেকর্ড দেবেন মানে হচ্ছে আপনার ইম্প্রেশন প্রফেসরের কাছে নষ্ট হবে।
প্রিডেটরি বোগাস জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ড দেখে চেনার উপায় কি?
প্রতিটা জার্নালের এডিটর প্যানেল বা বোর্ড থাকে। একজন চিফ এডিটর ও একাধিক সহকারী এডিটর থাকেন যারা একেকজন একেক টপিকে পারদর্শী। সকল এডিটরকে একসাথে ওই জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ড বলা হয়। একটা সত্যিকারের রেপিউটেড জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ড দেখলে নিমিষেই বুঝবেন যে এডিটরগণ বিভিন্ন দেশের হন, কোন স্পেসিফিক দেশ নয়। তাদের ভার্সিটির নাম ও এফিলিয়েশন লেখা থাকবে স্পষ্ট, কোন লুক ছাপা থাকবে না। তাদের ইমেইল এড্রেসও দেখবেন ভার্সিটির ইমেইল দেয়া।
অন্য দিকে বোগাস জার্নালের ওয়েবসাইটে গেলে দেখতে পাবেন এডিটরের ইমেইল জিমেইল বা অন্য ফ্রি আনঅফিশিয়াল ইমেইল। হয়তো দেখা যাবে বোগাস জার্নালের এডিটোরিয়াল প্যানেল মেম্বার যে লিস্ট ওয়েবসাইটে আছে তাদের হয় বেশিরভাগই ইন্ডিয়ান, না হলে চাইনিজ, আলজেরিয়ান, নাইজেরিয়ান ইত্যাদি সব দেশের। এগুলার অর্থই ওইটা একদম ভুয়া জার্নাল। এদের থেকে দূরে থাকুন।
প্রিডেটরি বোগাস জার্নালের ফেইক ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর কিভাবে চিহ্নিত করা যাবে?
বোগাস জার্নালগুলোর ওয়েবসাইটে গেলে আবার ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর দেয়া থাকতে পারে। এটা দেখেই একদম পটে যেয়েন না। কারণ এটা ফেইক ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর দেয়া থাকবে। ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ফেইক না অরিজিনাল সেটা যাচাইয়ের উপায় হলো Clarivate Analytics এর Journal Citation Report- JCR indexing রিপোর্ট চেক করা। Clarivate Analytics-ই পৃথিবীর সব রেপিউটেড ও রিলায়েবল জার্নালের ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও প্রকাশ করে। JCR indexing এ কোনো জার্নালের নাম না থাকা মানে ওটার কোন ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর নাই। JCR indexing এর ড্যাটা লিস্ট একসেস ওপেন নয়। এটা সাবস্ক্রিপশন বেইজড সার্ভিস। অর্থাৎ ইউনিভার্সিটির সাবস্ক্রিপশন না থাকলে ইন্ডেক্সিং লিস্ট একসেস করা যাবে না। বাংলাদেশের ভার্সিটিগুলার বেশিরভাগই সাবস্ক্রিপশন নেই। আপনাদের কারো জার্নাল ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন পড়লে আমাদের ওয়েবসাইট www.sschoolbd.com এ গিয়ে একেবারেই নিচের দিকে Contact form পূরণ করে আপনার জার্নাল ডিটেলস লিখে ভেরিফিকেশন রিকুয়েস্ট সাবমিট করতে পারেন। আমি সময় করে চেক করে জানাবো।
সার্বিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিলের ভার্সিটিগুলো থেকে প্রকাশিত জার্নালের মান কেমন?
আরেকটা খুবই গুরুত্তপুর্ন কথা উল্লেখ করি। অনেক সময় দেখবেন সার্বিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশের ভার্সিটিগুলো থেকে জার্নাল প্রকাশিত হয়। আমাদের দেশের অনেকেই সেসব জার্নালে পেপার সাবমিট করেন এই আশা নিয়ে যে সেসব জার্নাল আন্তর্জাতিক মানের। কিন্ত এডিটোরিয়াল বোর্ড চেক করলেই দেখবেন সেসব জার্নালের এডিটরগণ ওই দেশের ওই স্পেসিফিক ভার্সিটির স্যারেরাই হয়! পেপার পাবলিকেশন ওরাই করে! ওরাই রিভিউয়ার, আর ওরাই পাবলিশার! এডিটোরিয়াল বোর্ড চেক করলে দেখবেন সব কটা সার্বিয়ান, বা সব কটা পোল্যান্ডের বা সব কটা ব্রাজিলিয়ান। এগুলা হলো সস্তায় প্রমোশনের ধান্দা, আর কিছুই না! মানে যার যত পাবলিকেশন, তার প্রমোশন হয় দ্রুত আরকি। আমাদের দেশের ভার্সিটিগুলাতে ঠিক সেইম অবস্থা, পেপার প্রকাশনার কোয়ালিটি নাই, শুধু সংখ্যাধিক্য আছে।
এসব জার্নালে পেপার প্রকাশিত করার চাইতে না করাই ভালো, কারণ এসব জার্নালে প্রকাশিত লেখা আপনি যখন সনামধন্য কোন আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ার ভার্সিটিতে এপ্লাইয়ের সময় উল্লেখ করবেন, এডমিশন কমিটিতে বসে থাকা প্রফেসররা এসব দেখলে আপনার উপর ব্যাড ইম্প্রেশন তৈরী হবে। তারা বুঝবে আপনার রিসার্চ প্রকাশনা সম্পর্কিত নলেজ নাই, বা আপনি কোয়ালিটি না বরং পাবলিশ করতে পারলেই হলো এমন নীতিতে বিশ্বাসী বা আপনি রিলায়েবল রিসার্চ কমিউনিটির সাথে সুপরিচিত নন। বিশ্বাস করুন এসব গার্বেজ প্রকাশনা আপনার সিভিকে সমৃদ্ধ করার চেয়ে বরং আপনার সিভিকে দূষিত করবে। আপনারা কি মনে করেছেন আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ার ভার্সিটির প্রফেসররা এসব গার্বেজ প্রকাশনা ধরতে পারবেন না? প্রফেসররা যে যার ফিল্ডের এক্সপার্ট, এসব গার্বেজ প্রকাশনা ফিল্টারিং করতে তাদের ১ সেকেন্ড লাগবে।
রিলায়েবল জার্নাল ও কনফারেন্স সম্পর্কে কিভাবে জানবেন?
1. সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টস, সোশ্যাল সায়েন্স যেই ফিল্ডেরই হন না কেন Clarivate Analytics এর মাস্টার জার্নাল লিস্ট ঘাটুন- এই লিস্টে জার্নালগুলি রিলায়েবল।
2. এছাড়া Scopus এর লিস্ট ঘাটুন।
3. বিজনেস ফিল্ডের যারা আছেন তারা ABDC Journal Quality List ঘাটুন। ABCD হলো Australian Business Deans Council এর সংক্ষেপ। ওই লিংকে গেলেই রিলায়েবল বিজনেস ও ম্যানেজমেন্ট জার্নালগুলি পেয়ে যাবেন এক্সেল ফাইলের লিংকে।
এছাড়া সাবজেক্ট ওয়াইজ যার যার ফিল্ড সেসব ফিল্ডের টেকনিক্যাল সোসাইটির ওয়েবসাইট ঘাটতে শিখুন। ফিজিক্সের হলে APS এর ওয়েবসাইট এ যান, সেখানে জার্নাল/কনফারেন্স গুলা সম্পর্কে ধারণা নিন। সেইমভাবে, EEE হলে IEEE/IET এর ওয়েবসাইটে জার্নাল/কনফারেন্স লিস্ট চেক করুন, সিভিল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার হলে ASCE, ASME, ACM ইত্যাদি সোসাইটির জার্নাল/কনফারেন্স গুলা দেখুন। এভাবে যার যার সাবজেক্ট এর টেকনিক্যাল সোসাইটি সম্পর্কে আগে জানুন, ওই সোসাইটি গুলিই বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজন করে, সেগুলা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।
সাবজেক্ট ওয়াইজ রিলায়েবল আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের খোঁজ পাবেন কিভাবে?
কিছু সাব্জেক্টের আন্তর্জাতিক সোসাইটির নাম আমি নিচে দিয়ে দিচ্ছি যাতে আপনি এসব ওয়েব সাইট থেকে নিজ নিজ ফিল্ডের ভালো কনফারেন্সগুলো বের করে নিতে পারেন। অনেক রিসার্চ করে ঘেটে ঘেটে এগুলো একটা একটা করে বের করেছি। তাই উপকার পেলে অবশ্যই জানাবেন, সেটা মেসেজে বা কমেন্টের মাধ্যমেই হোক:
Engineering:
*Civil engineering : ASCE
*Mechanical: ASME
*CSE: ACM
*Material Engg: ASM
*Industrial Engg: IISE
*Aeronautics Engg: AIAA,
*Agriculture Engg: ASABE
Science:
*Chemistry: ACS
*Microbiology: ASM
*Biology: AIBS
*Botany: BSA
*Statistics: ASA
*Geography: AGS
*Environment science: ESA
Arts:
*Development Studies: DSA,
*Law: ASIL
Business & Economics:
*Finance: AFA
IEEE কনফারেন্স নিয়ে একটা কমন ভুল ধারণা (এই প্যারাটি শুধু EEE/CSE দের জন্য)
অনেকেই উল্লেখ করেন পাবলিকেশন প্রোফাইলে যে IEEE কনফারেন্স পাবলিকেশন। কিন্ত আসলে IEEE লোগো কনফারেন্স ব্যানারে টানিয়ে দিলেই IEEE কনফারেন্স হয়ে যায় না। আগে দেখুন সেই কনফারেন্সটি IEEE ওয়েব সাইটে নিবন্ধিত কিনা এখান থেকে।
তারপর দেখুন IEEE এর কোন টেকনিক্যাল সোসাইটি এই কনফারেন্স এর টেকনিক্যাল স্পনসর। যেমন এন্টেনা ফিল্ডের কনফারেন্স হলে IEEE APS (Antenna and Propagation Society) বা IEEE MTT-S (Microwave Theory and Techniques Society) এর স্পনসর হতে পারে।
তেমনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স/বায়োইনফর্মেটিক্স নিয়ে কোনো কনফারেন্স হলে সেটা IEEE Computational Intelligence Society (CIS) স্পনসর করতে পারে।
IEEE তে অনেক সোসাইটি আছে যেমন - আপনি যদি Photonics নিয়ে রিসার্চ করেন তবে IEEE photonics society এর অর্গানাইজেশনাল ওয়েবসাইটে খোঁজ নিন। এই সোসাইটির ওয়েবসাইটে কনফারেন্স লিস্ট চেক করে দেখুন আছে কিনা আপনার কনফারেন্স। এরকম রিসার্চ রিলেটেড আলাদা আলাদা সোসাইটি আছে IEEE-তে।
যদি তেমন কোন সোসাইটির স্পনসরশিপ না দেখে থাকেন, তাহলে এটা অফিসিয়ালি কোনো IEEE সোসাইটির কনফারেন্স না, বরং লোকাল দেশীয় IEEE একটিভিস্টদের দ্বারা আয়োজিত হবার সম্ভাবনাই বেশি। এসব ক্ষেত্রে এগুলা ডোমেস্টিক কনফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হবে< ইন্টারন্যাশনাল নয়।এখন থেকে আপানি যে ফিল্ডে কাজ করেন সেই সোসাইটির ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানুন, কনফারেন্স এলার্ট অন করে রাখুন। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। অন্যান্য সাবজেক্টের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আগে নিজের ফিল্ডের টেকনিক্যাল সোসাইটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিন।
কনফারেন্স পেপার পাবলিকেশনের ধাপ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিখাটি পড়ুন।
অনেক ঘাটাঘাটি করে রেডি করেছি লিখাটা, লেখাটি কপি করার সময় দয়া করে 'কালেক্টেড' না লিখে, ক্রেডিট সহ উল্লেখ করুন:
Md Nazmul Hasan Topu, Founder, Scholarship School BD
PhD researcher, Electrical & Computer Engineering
University of British Columbia, Vancouver, Canada
লিখাটি ব্যবহার করতে চাইলে, অবশ্যই লেখকের নাম, ও প্রতিষ্ঠান এর যথাযথ ক্রেডিট সহকারে করতে হবে।
লিখাটি শেয়ার করুন ও ইউটিউবে আমাদের টিপস গুলি ফলো করুন। প্রতিদিন স্কলারশিপ নিউজ, ও প্রফেসর ফান্ডিং টিপস, IELTS, GRE, রিসার্চ টিপস পেতে এখুনি জয়েন করুন Scholarship School BD Website: www.sschoolbd.com
Comments