
প্রফেসরদের ইমেইল করতে করতে যারা ক্লান্ত/ বা রেস্পন্স পান না এমন তাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। হয়তো এর থেকে যারা ইমেইল করে জবাব না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন, তারা কিছুটা প্রান ফিরে পাবেন।
কিছুদিন আগে আমার পিএইচডি সুপারভাইজরের অফিস রুমে বসে তার সাথে কথা হচ্ছিল প্রজেক্ট নিয়ে। কথার মাঝখানে তার মোবাইলের ইমেইল নোটিফিকেশন আসে। ওই থেকে কথা প্রসংগ ইমেইলের দিকে চলে যায় আর উনি বলতে থাকেন প্রতিটা সেমিস্টার শুরু হয় আর তার ইনবক্সে ইমেইলের বন্যাও শুরু হয়। ভার্সিটি থেকে এইটা সেইটার ইমেইল, নানান কমিটির ইমেইল, স্টুডেন্টদের ইমেইল। আবার কোলাবোরেটরদের কাছ থেকে হরদম তারা ইমেইল পেতেই থাকেন। কোলাবরেটর রাও কিন্ত প্রফেসর, অন্য দেশের ও অন্য ভার্সিটির যাদের সাথে উনারা একসাথে রিসার্চ করেন, পেপার পাব্লিশ করেন। সো তাদের ইমেইল পড়তে হয়, এবং রিপ্লাই দিতেও হয় যেটা প্রধান প্রায়োরিটি তাদের। এর মাঝে আবার ফান্ডিং এজেন্সির থেকে ইমেইল, এডমিশন কমিটির ইমেইল, আবার ভার্সিটির নানান এডমিনিসট্রেটিভ ইমেইল। আবার যেসব জার্নালে তারা রিভিউয়ার সেসব জার্নাল থেকে হরদম পেপার রিভিউ রিকুয়েস্ট ইমেইল আসে, সেগুলাও তাদের গুরুত্ব নিয়ে পড়ে রিপ্লাই দেয়া লাগে।
আবার, প্রফেসরদের গ্রুপে বর্তমান স্টুডেন্ট দের অনেকেই ভার্সিটিতে ফেলোশিপ, স্কলারশিপ, বা ইন্ডাসট্রি তে ইন্টার্নশিপে যায়, তাদের সবার রেকোমেন্ডেশন লেটার লাগে। সেগুলাও প্রফেসরদের লিখে যথাযথ ডেডলাইনের মাঝে ইমেইল করা লাগে। সেগুলার জন্য আবার আমাদের মত বর্তমান স্টূডেন্টদের কাছ থেকে তার রিমাইন্ডার ইমেইল আসে। এই সপ্তাহেই আমার প্রফেসরকে ১২ টার মত শুধু রেকোমেন্ডেশন লেটার লিখতে হইছে আমরা যারা ফেলোশিপ/ ইন্টার্র্নশিপ এর আবেদন করেছি তাদের সবার জন্য।
এত এত ইমেইলের ভিড়ে আপনার করা একটা ইমেইল পড়বার সুযোগ বের করা বা সিভি, ট্রান্সক্রিপ্ট ভালো করে পড়ে জবাব দিতেও তার একটু সময় প্রয়োজন।
এই সেদিনই ক্লাস শেষে আমি আর আমার ল্যাবের আরও দুজন পিএইচডি কলিগ প্রফেসরকে হলরুমে দাড় করায়ে ইমেইল করালাম। আমাদের সামনে দাড়ায়ে দাড়ায়ে উনি আমাদের তিনজনের তিনটা ইমেইল লিখে গ্র্যাড অফিসে সেন্ড করলেন। কথায় কথায় বলতেছিলেন উনার ইনবক্সে প্রায় ১০০ টার মত ইমেইল এখনো রয়ে গেছে যেগুলো উনার সময় করে বসে পড়তে হবে। ঊনার চেহারা দেখে মায়া লাগতেছিল ওই সময়।
আরেকটা ঘটনা বলি। কানাডায় পিএইচডিতে আসার আগে সাউথ কোরিয়াতে মাস্টার্স করতেছিলাম তখন। একদিন আমার প্রফেসরের রুমে ওয়ান-টু-ওয়ান মিটিং চলছিল। আমি উনার পাশে বসা ছিলাম, মনিটর আমাদের দিকে ছিল, কিছু রিসার্চ গ্রাফ নিয়ে ডিস্কাশন চলছিল। এর মাঝে মনিটরের কর্নারের দিকে প্রফেসরের নিউ ইমেইল নোটিফিকেশন আসে। ইমেইলের সাব্জেক্ট পড়া যাচ্ছিল, আমি চট করে দেখে নিয়েছিলাম নোটিফিকেশনটা অদৃশ্য হয়ে যাবার আগে। দেখলাম- গ্র্যাজুয়েট স্টূডেন্ট রিসার্চ অপরচুনিটি এরকম কিছু ছিল। বুঝলাম নতুন কোন ক্যানডিডেট আমাদের গ্রুপে জয়েন করার জন্য ইমেইল করছে। প্রফেসর দেখলাম ইমেইলটা না পড়ে সেটা ইমেইলেরই একটা ফোল্ডারে মুভ করে দিলেন। ফোল্ডারের নাম নিউ গ্র্যাড স্টুডেন্ট। কম্পিউটারের ড্রাইভে যেমন ফোল্ডার-ওইয়াইজ ফাইল গুলি আমরা স্টোর করে রাখি তেমনি ইমেইলের ইনবক্সের নানা কিসিমের ইমেইল টপিক ওয়াইজ স্টোর করে রাখা যায়। এতে পরে ইমেইল টপিক ওয়াইজ রিট্রিভ করা ইজি হয়।
ওই ঘটনা নিজে দেখার পর বুঝেছিলাম প্রফেসররা অনেক সময় ইমেল সাথে সাথে পড়ে না বাট সেভ করে রাখেন ফোল্ডার-ওইয়াইজ, যাতে পরে সময় নিয়ে এক এক করে এসব নিউ স্টূডেন্ট যারা এপ্লাই করে তাদের ইমেল পড়তে পারে।
প্রফেসররা প্রতিটা দিন কি পরিমান নানা ধরনের ইমেইল পান সেটা বাংলাদেশে বসে ঘুনাক্ষরেও অনুমান করতে পারবেন না কারন ওই রকম পরিবেশ বা ফ্লেভার দেশের কোন ভার্সিটিতে আপনারা দেখে আসেন নাই, বিধায় চিন্তায় আসার কথাও না। ইমেইল করে রিপ্লাই না পেলে প্রফেসরদের প্রতি বিরক্ত না হয়ে বরং ৪/৫ দিন পর একটা ২/৩ লাইনের ছোট রিমাইন্ডার ইমেইল দিবেন, একি থ্রেডে। যেন আগের ইমেইল টা উপরে ভিজিবল থাকে।
বাইরে পড়তে আসার জন্য প্ল্যানিং এর সাথে সাথে অনেক ধৈর্য লাগে। একটুতেই হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলে মুশকিল। লেগে থাকুন। রেসপন্স আসবে এক সময়। প্রফেসর রিপ্লাই না দিলে ফলো-আপ ইমেইল কিভাবে লিখবেন?
প্রফেসরদের ইমেইল দেয়ার পরে রিপ্লাই না পেলে, অনেক সময় ফলো-আপ ইমেইল করা উচিত। কারন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা কনফারেন্স, প্রজেক্ট প্রপোজাল ডেডলাইন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কিংবা সিম্পলি চোখে না পড়ার কারনে, অথবা স্প্যামে গেলে বা টেকনিক্যাল এরর এর জন্য প্রথম ইমেইলটা হয়তো পড়া হয়না। আপনার ভাগ্য সহায় হলে ফলো-আপ ইমেইল করলে হয়তো ক্লিক হতে পারে।
প্রথম ইমেইল করার নুন্যতম কয়দিন পর ফলো-আপ ইমেইল করা উচিত? ফলো আপ ইমেইলে কি লিখবেন?
ভিডিও দেখলেই সব কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে:
লিখাটি শেয়ার করুন ও ইউটিউবে আমাদের টিপস গুলি ফলো করুন। প্রতিদিন স্কলারশিপ নিউজ, ও প্রফেসর ফান্ডিং টিপস, IELTS, GRE, ক্যারিয়ার টিপস পেতে এখুনি জয়েন করুন Scholarship School BD. For more information, visit us: www.sschoolbd.com
Md Nazmul Hasan Topu, Founder, Scholarship School BD
PhD researcher, Electrical & Computer Engineering
University of British Columbia, Vancouver, Canada
Comments